বুধবার

২৫শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১১ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাবির সাবেক উপ-উপাচার্যের নামে বিস্ফোরক মামলা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপ-উপাচার্য ও বর্তমান বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা-সহ ১৪৮ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে বিস্ফোরক মামলা করা হয়েছে। এসময় অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়।

গত ১২ মে (সোমবার) বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলাটি করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ।

গুলি বর্ষণ এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম, দলবদ্ধভাবে পথরোধ করে হত্যার উদ্দেশ্য এবং ককটেল বিস্ফোরণ আইনে মামলাটি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

মামলার বাদী সিজান (৩২) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় আন্দোলনকারী। তিনি রাজশাহীর শাহমাখদুম থানার পবাপাড়ার মো. সুলতান সরদার ও মোসা. রেহেনা পারভিন দম্পতির সন্তান।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সিজানের নেতৃত্বে গত ৫ই আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টায় সাত শতাধিক ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ জনতা নিয়ে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন মোড় হতে স্বৈরাচারী সরকার পতনের জন্য রাজশাহী শহরের দিকে যাত্রা শুরু করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলটি বোয়ালিয়া থানাধীন খরবোনা সাঁকো ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলীর কার্যালয়ের সামনে পাকা রাস্তার পাশে পৌঁছালে আগে থেকে ওত পেতে থাকা আসামীরা তাদের উপর হামলা করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা হ্যান্ড মাইকে প্রকাশ্যে উচ্চস্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা কেউ যেন প্রাণে বাঁচতে না পারে সেই নির্দেশ দেন। এসময় ৩ থেকে ৩৯ নং আসামিগণ আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ছাত্র জনতার উপর নির্বিচারে গুলি ছুড়তে থাকে। এসময় ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৫নং আসামি আরমান আলীর কার্যালয়ের সামনে পাকা রাস্তার উপর আমাকে পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত আক্রমণ করে। ফলে আমার উভয় পায়ের হাটুর নিচে গুরুতর জখম করে এবং বাম হাতের কনুই আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আমি ঘটনাস্থলে গুরুতর আহত হয়ে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে থাকি। তাৎক্ষণিক ৪০ থেকে ১৪৮ নং আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ জনতার মিছিলকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান এবং ধারালো অস্ত্র, চাইনিজ কুড়াল, জিআই পাইপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শান্তিকামী মিছিলের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে।

এসময় আমি গুরুতর আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলে আমার শরীরে ২২টার মত সেলাই লাগে। পরে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে পরিবার ও সহকর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে থানায় মামলা দায়ের করতে কিছুটা বিলম্ব হয়।

এদিকে মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাজশাহী-২ আসনের এমপি শফিকুর রহমান বাদশার ছেলে মাহমুদুর রহমান দ্বীপন, রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও বর্তমান বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা প্রমুখ।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা বলেন, “এ বিষয়ে আমার কোনো কিছু জানা নেই। আমি কখনোই ঘটনাস্থলে ছিলাম না। হয়ত আমার প্রতি কারো রাগ থাকতে পারে সেই জায়গা থেকেই মামলায় আমার নামটা দিয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।”

বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, গত ১২ মে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। আইন অনুযায়ী মামলার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

spot_img

এ বিভাগের আরও সংবাদ

spot_img

সর্বশেষ সংবাদ