বুধবার

২৫শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১১ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাতার ফাঁকে ফাঁকে আমের গুটি, ভালো ফলনের আশা

আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে সারি সারি আমগাছ ও বাগানের পর বাগান শুধুই মুকুল আর মুকুল। পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে আমের গুটি। আমবাগানের মৌ মৌ গন্ধে মন জুড়াচ্ছে বাগান মালিক ও আমচাষিদের।

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় দুই সপ্তাহ আগেই গাছে এসেছে আমের মুকুল। কৃষি বিভাগ চলতি মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন।

চলতি মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার ও রফতানি কার্যক্রমে গতি না আসলে বেশি আম উৎপাদনের বছরেও ক্ষতির আশঙ্কা আমচাষিদের।

জানা যায়, জেলার আম বাগানগুলোতে প্রায় ৯০ শতাংশ গাছে দেখা গেছে মুকুল। ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ গাছে দেখা দিয়েছে আমের গুটি।

আমচাষি ও কৃষি বিভাগ জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার আম মৌসুমের অন ইয়ার অর্থাৎ বেশি ফলনের বছর। পাশাপাশি কুয়াশা কম থাকায় মৌসুমের শুরুতেই ব্যাপক হারে মুকুল দেখা দিয়েছে জেলার আমবাগানগুলোতে। গাছে থাকা মুকুল যাতে ঝরে না পড়ে তাই কীটনাশক স্প্রে ও সেচসহ বিভিন্ন পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় রয়েছে শতবর্ষীসহ বিভিন্ন বয়সের ৮১ লাখ ৫২ হাজার ৪৯০টি আমগাছ।

কৃষি বিভাগের মতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছর ৮১ লাখ ৫২ হাজার ৪৯০ আমগাছ ও আমবাগানের আয়তন ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমি। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রায় সব গাছেই মুকুল এসেছে। জেলায় গড়ে ৯০ ভাগ আমগাছে মুকুল আসে।

সদর উপজেলায় আমগাছ আছে ১১ লাখ ৯ হাজার ৯০০টি। এর মধ্যে মুকুলিত হয়েছে ৯০ ভাগ আমগাছ। এই ৯০ ভাগ গাছে এরই মধ্যে কোনো কোনোটিতে সরিষা দানা আবার কোনো কোনোটিতে মটর দানার মতো আমের গুটি বেরিয়েছে ৫৫ ভাগ।

শিবগঞ্জ উপজেলায় আমগাছ আছে ২২ লাখ ৭৪ হাজার ২৫টি। এর মধ্যে মুকুল এসেছে ৮৫ ভাগ আমগাছে। এই ৮৫ ভাগ গাছের মধ্যে বর্তমানে সরিষা দানা ও মটর দানার আকারের গুটি বেরিয়েছে ৩৫ ভাগ গাছে।

গোমস্তাপুর উপজেলায় আমগাছ আছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ১০০টি। এর মধ্যে মুকুলিত হয়েছে ৯৬ ভাগ আমগাছ। এরই মধ্যে ৪০ ভাগ গাছে ছোট আমের গুটি দেখা দিয়েছে।

নাচোল উপজেলায় আমগাছ আছে ৩০ লাখ ৪ হাজার ৩৩০টি। এর মধ্যে ৯৩ ভাগ আমগাছে মুকুল এসেছে। এরই মধ্যে ৭০ ভাগ গাছে সরিষা ও মটর দানা আকারের আম লক্ষ্য করা গেছে ৭০ ভাগ।

ভোলাহাট উপজেলায় আমগাছ রয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি। এর মধ্যে মুকুলিত হয়েছে ৯৫ ভাগ আমগাছ। বর্তমানে ৪৫ ভাগ গাছে আমের গুটি বেরিয়েছে।

এ বিষয়ে আমচাষি আব্দুল হান্নান জানান, এ বছর এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। গাছে গাছে প্রচুর মুকুল ও মুকুল ফুটে বের হচ্ছে গুটি। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগ গাছে আমের গুটি চলে আসবে।

আশা করি , এ বছর বাম্পার ফলন হবে। তবে এ বছর বেশি ফলন হলেও ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়। কারণ আমের দাম কম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি বাইরে আম রফতানি না হলে অথবা প্রক্রিয়াজাত করণ না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন চাষিরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, ‘অন ইয়ারের প্রভাবে জেলার আমবাগানগুলোতে বেশি ফলন হওয়ায় চলতি বছর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে ব্যাপক। তবে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমের বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন ও বিদেশে আম রফতানি বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে বেশি ফলন হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কৃষকদের।’

কৃষি বিভাগ ও সরকারের প্রতি আমের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে শতভাগ কাজে লাগাতে আম প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন ও এই খাতে বিনিয়োগের দাবি এই কৃষক নেতার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যথাসময়ে আমগাছগুলোতে মুকুলিত হয়। যারা আমগাছের পরিচর্যা করেছেন, তাদের গাছে বেশি মুকুল এসেছে এবং টিকেও গেছে। তবে যারা পরিচর্যা করেননি, তাদের গাছগুলোয় কিছুটা মুকুল নষ্ট হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের যথাযথ পরিচর্যা ও যতœ নিতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আম বেশি উৎপাদনের বছরে যাতে কৃষকরা ভালো দাম পান, সেদিকে নজর দেয়া হচ্ছে। আম প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিদেশে আম রফতানিতে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ।

চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন।

spot_img

এ বিভাগের আরও সংবাদ

spot_img

সর্বশেষ সংবাদ