বুধবার

২৫শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১১ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তীব্র গরমে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের কোটি কোটি মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চলে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার শুরু হওয়া এই তাপপ্রবাহে প্রায় ১৬ কোটিরও বেশি মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। নিউইয়র্ক শহরের তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বড় মাত্রার তাপপ্রবাহ শুরু হয়। তবে এ সপ্তাহে সোমবার ও মঙ্গলবার তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়। বিশেষত, ওয়াশিংটন, বাল্টিমোর, ফিলাডেলফিয়া ও নিউইয়র্ক সিটিতে এ তাপপ্রবাহ সবচেয়ে বেশি।

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস সতর্ক করে বলেন, এই তীব্র গরম শুধু অস্বস্তিকর বা অসহনীয়ই নয়, বাসিন্দাদের জন্য বিপজ্জনকও হতে পারে। তিনি বলেন, প্রতি বছর গরমে এই শহরের ৮০ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ৫০০ জনের মৃত্যু ঘটে। পরিস্থিতিকে গুরুত্ব না দিলে খুবই কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

তিনি জানান, প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে যেসব প্রবীণ নাগরিক ও অসুস্থ ব্যক্তির বাসায় এসি নেই, তাদের পর্যাপ্ত পানি পান করতে এবং নিকটবর্তী কুলিং সেন্টার, লাইব্রেরি ও রিক্রিয়েশন সেন্টারে আশ্রয় নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সোমবার ম্যানহাটনের ‘ফুসফুস’ খ্যাত সেন্ট্রাল পার্কের তাপমাত্রা ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। যা ১৮৮৮ সালের পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিওএস) জানায়, দেশের পূর্বাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় চরম তাপপ্রবাহ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এতে অন্তত ২৯টি অঙ্গরাজ্যের ১৬ কোটি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন।

সংস্থাটি আরও জানায়, এই মাত্রার তাপপ্রবাহ বিরল ও দীর্ঘস্থায়ী। রাতেও তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে না এবং যারা পর্যাপ্ত ঠান্ডার ব্যবস্থা বা পানীয় গ্রহণ করে না, তাদের জন্য এটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

আবহাওয়াবিদরা এ অবস্থাকে বোঝাতে ‘হিট ডোম’ বা তাপগোলক পরিভাষা ব্যবহার করছেন। এটি একটি উচ্চ চাপ বলয়, যা গরম বাতাসকে আটকে রাখে এবং ক্রমাগত তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে। তবে নিউইয়র্কবাসীর জন্য এই দাবদাহেও কাজ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই।

শহরের হারলেম এলাকায় ভবনের বাইরের অংশ মেরামতের কাজে ব্যস্ত শ্রমিক মানুয়েল বলেন, ‘আমাদের সহ্য করতে হয়। না করলে বাঁচব কী করে?’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু সময় বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রাখি। সবার শক্তি তো এক রকম নয়।’

ওয়াশিংটন হাইটস এলাকায় কর্তৃপক্ষ কয়েকটি ফায়ার হাইড্রেন্ট খুলে দিয়েছে, যাতে বাসিন্দারা পানি ছিটিয়ে কিছুটা স্বস্তি পান।

৪৪ বছর বয়সী এসি টেকনিশিয়ান রোনাল্ড মার্সেলিন পিৎজার দোকানে এসি মেরামত করতে গিয়ে নিজেই প্রচণ্ড ঘামছিলেন। কথা বলতে চাইলে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমি গরম সহ্য করছি, যাতে অন্যরা ঠান্ডা থাকতে পারে।’

ওয়াশিংটনে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা মিলিয়ে হিট ইনডেক্স সোমবারে পৌঁছাতে পারে ৪৩.৩ ডিগ্রি সেলসেয়িাস পর্যন্ত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের চরম তাপপ্রবাহ হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সরাসরি প্রভাব। ভবিষ্যতে এগুলো আরও দীর্ঘ ও তীব্র হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০২৪ সাল ছিল বিশ্বের উষ্ণতম বছর। আর ২০২৫ সাল শীর্ষ তিন উষ্ণতম বছরের একটি হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

spot_img

এ বিভাগের আরও সংবাদ

spot_img

সর্বশেষ সংবাদ