বুধবার

২৫শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১১ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডিএসসিসি নগরভবনে আরিফুজ্জামান-আরিফ চৌধুরী গ্রুপের ক্ষমতার মহড়া

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বদলে যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দৃশ্যপট। আগে যেখানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগপন্থী শ্রমিক নেতারা নগর ভবনে আধিপত্য বিস্তার করতেন, এখন সেই একই রূপে ফিরে এসেছে বিএনপিপন্থী শ্রমিক নেতারা।

নতুন এই বাস্তবতায় শুরু থেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আরিফ চৌধুরী ও আরিফুজ্জামান প্রিন্সের নেতৃত্বে দুটি গ্রুপের মধ্যে চলছে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের লড়াই। সম্প্রতি ঈদুল আজহার আগে দুই পক্ষের মধ্যে এক দফা সংঘর্ষ হয়, যাতে আরিফুজ্জামান প্রিন্সসহ তার অনুসারীরা আহত হন। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আজ মঙ্গলবার আবারও সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রুপ। আরিফ চৌধুরী নিজেকে ইশরাকের শপথ ইস্যুতে সক্রিয়কর্মী দাবি করে আরিফুজ্জামান প্রিন্সকে ফ্যাসিস্ট ট্যাগ দিয়ে কোনঠাসা করার চেষ্টা করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকালে নগর ভবনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করতে গেলে ইশরাক হোসেনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত আরিফ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গ্রুপের লোকজন তাদের বাধা দেয়। সচিবের ব্যক্তিগত সহকারীকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং কম্পিউটার অপারেটর মিন্টুকে মারধর করা হয়। এছাড়া কয়েকজন প্রকৌশলীকে জোরপূর্বক রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়।

ঘটনার পর দুই গ্রুপের প্রধান পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন। আরিফুজ্জামান প্রিন্স আমাদের সময়কে বলেন,‘দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে রবিবার থেকে আন্দোলন স্থগিত করা হয়। সে অনুযায়ী আমরা অফিস করতে যাই। কিন্তু আরিফ চৌধুরীর লোকজন আমাদের রুম থেকে বের করে দেয়। আমি প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হই। আমি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সকাল থেকেই সংঘর্ষের কারণে কর্মচারীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। কেউ ভয়ে অফিস করতে পারছে না। সাধারণ মানুষও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেবা চালু রাখার জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সেখানে সেবা আরও বিঘ্নিত করা হচ্ছে। প্রকৌশলীরা অফিস করতে পারছে না।’

অন্যদিকে, আদালতের রায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইশরাক হোসেনের মিডিয়া সেলের মাধ্যমে আরিফ চৌধুরী জানান, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগরভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল। কিন্তু হঠাৎ বহিরাগতরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়।

বেলা ১১টায় থেকে ঢাকাবাসীর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা নগর ভবনে জড়ো হলে বহিরাগতরা আচমকা হামলা চালায় বলে জানা গেছে। হামলায় আহত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় নিত্যদিনের মতো শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনকারীরা নগর ভবনের গেটে অবস্থান করলে উশৃংখল বেশকিছু যুবক দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা করে। এ হামলা থেকে বাদ যায়নি সাংবাদিকরাও। হামলাকারীরা চাকু দেখিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদেরও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

এই হামলায় বেশকিছু আন্দোলনকারী গুরুতর আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারী মনির, জসীম, মহিদুল, জুয়েল, কাইয়ুম, দিনার, জনিসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আঘাত পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা ভর্তি হয়েছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফের ঘনিষ্ঠতম হিসেবে পরিচিতি প্রকৌশলী রুবেলের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে বলে জানান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আরিফ চৌধুরি। তিনিও এই হামলায় আহত হয়েছেন।

তিনি জানান, ঢাকাবাসীর ন্যায্য আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য দুদকে অভিযুক্ত সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী আসিফ ঘনিষ্ঠ রুবেল বহহিরাগতদের সংগঠিত করে এই হামলা চালায়। এই রুবেল অবৈধ মেয়র তাপসের ঘনিষ্ঠতম সহযোগী হিসেবেও পরিচিত। ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে এই রুবেল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের সকল ঠিকাদারী কাজ ভাগ বাটোওয়ারা কিরতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

spot_img

এ বিভাগের আরও সংবাদ

spot_img

সর্বশেষ সংবাদ